কীভাবে লম্বা হওয়া যায় || লম্বা হওয়ার লক্ষন

কীভাবে লম্বা হওয়া যায় || লম্বা হওয়ার লক্ষন

পৃথিবীতে বিভন্ন রকমের মানুষ আছে যারা উচ্চতায় কম, তারা অনেকেই প্রশ্ন করেন কীভাবে লম্বা হওয়া যায়। প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জানাব কিভাবে লম্বা হওয়া যায়। সুন্দর হতে সবাই চায়। সঠিক উচ্চতা আপনার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। লম্বা হওয়ার অনেক লক্ষণ রয়েছে। লম্বা হওয়ার প্রথম লক্ষন হলো আপনার বয়স অনুসারে কতটুকু লম্বা হচ্ছেন। বছরে আপনি যদি পাঁচ থেকে সাত সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হন, তাহলে বুঝবেন আপনার উচ্চতা বৃদ্ধির হার সঠিক আছে।

লম্বা হওয়ার জন্য আমরা অনেক পরিশ্রম করে থাকি। তবে সঠিক নিয়ম আমাদের জানা নেয়। একজন মানুষ কতটা লম্বা হবে তা নির্ধারণ করে মানুষের শরীরে থাকা জিন। আমাদের শরীরে থাকা গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধি হলে উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। খাদ্যঅভ্যাস,ব্যায়াম এবং নিয়মিত ঘুমকে কাজে লাগিয়ে আপনারা উচ্চতা বাড়াতে পাড়েন । এই আর্টিকেলটি পাঠ করে বিস্তারিত জানব।

লম্বা হতে গেলে কী কী করা উচিত

লম্বা হতে গেলে আমাদের বেশ কিছু টিপস মানতে হবে। প্রথমেই আসি খাদ্যঅভ্যাস , লম্বা হতে চাইলে আমাদের দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরন করতে হবে। দেহে পুষ্টির অভাব থাকলে লম্বা হওয়া যায় না। আমাদের সুষম খাদ্য খেতে হবে। চলুন দেখি কী খেলে লম্বা হওয়া যায়।

  • ওটস: লম্বা হওয়ার জন্য যেসব উপাদান প্রোয়োজন তা ওডসের মধ্যে আছে।
  • দুধ: দুধে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম,যা হাড় বৃদ্ধি করে। ফলে উচ্চতা বাড়ায়। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দুই থেকে তিন গ্লাস দুধ রাখবেন।
  • ডিম: ডিম প্রোটিনের সেরা উৎস। লম্বা হতে ডিম খাবেন।
  • কলা: কলাতে প্রচুর আয়রন থাকে। সকালে ওডসের সাথে কলা খাবেন।

সবুঝ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন থাকে, দই তে থাকে প্রচুর প্রোটিন। এছারা সময় করে প্রতিদিন ব্যায়াম করবেন। ব্যায়াম করার ফলে হাড়ের গঠন বৃদ্ধি পায় এবং আপনার পেশিকে সঞ্চারিত করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আপনার মানসিক চাপ দূর করে , উপরের বলা টিপসগুলো ফলো করলে আপনার উচ্চাতা বৃদ্ধি পাবে।

ছেলেদের উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়

ছেলেদের সাধারণত ২১ বছর বয়স পর্যন্ত দ্রুত উচ্চতা বাড়ে। তবে ২১ এর পর খুব একটা উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব হয় না। সঠিক খাবারে ছেলেদের উচ্চতা বৃদ্ধি করা যায়। অপুষ্টির জন্য দেহের উচ্চতা বাধাগ্রস্থ হয়। তাই খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ডিম, দুধ, কলা, সয়াবিন, সবুজ শাক-সবজি, গাজর, সিমের বিচি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় থাকা জরুরি। ছেলেদের জন্য শারিরিক ব্যায়াম লম্বা হওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। স্ট্রোডিং ব্যায়াম দেহের উচ্চতা বৃদ্ধি করে। এছারাও সাঁতার, সাইকেল চালানো, ক্রিকেট ,ফুটবল, টেনিস খেলার মাধ্যমে ছেলেদের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। যোগব্যায়াম করেও উচ্চতা বাড়ানো যায়। যোগব্যায়াম মানসিক চিন্তা দূর করে। দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমায়। ফলে দ্রুত উচ্চতা বাড়ে। পরিমাণ মতো ঘুম ও বিশ্রাম ছাড়া উচ্চতা বাড়ানো যায় না। পানিশূন্যতায় ভুগলে উচ্চতা বাড়ানো যায় না। ওজন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পানি পান করা জরুরি।উপরের পদ্ধতিগুলো ছেলেদের উচ্চতা বাড়াতে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে।

মেয়েরা কত বছর পর্যন্ত লম্বা হয়

মেয়েরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত দ্রুত লম্বা হয়। তাই লম্বা হওয়ার জন্যে আপনাকে তার আগেই চেষ্টা করতে হবে। মেয়েদের লম্বা হওয়ার বিশেষ কিছু টিপস রয়েছে। খাদ্যঅভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে মেয়েরা তাড়াতাড়ি উচ্চতা বাড়াতে পারবে । মূলত বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা দ্রুত লম্বা হয়। মেয়েরা ১০-১৮ বয়স পর্যন্ত বেশি লম্বা হয়। বয়ঃসন্ধিকালের সময় শেষ হতে না হতেই মেয়েদের লম্বা হওয়ার প্রবনতা হ্রাস পায়। তবে ১৮ বছর বয়সের পরে মেয়েরা কিছুটা লম্বা হয়, যা ২১ বছরে থেমে যায়। মেয়েদের লম্বা হওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকালের পর্যায়ে।

মেয়েদের লম্বা হওয়ার ব্যায়াম

লম্বা হওয়ার জন্যে আপনার হরমোনে সমস্যা আছে কিনা দেখতে হবে। মেয়েরা ঘরোয়া উপায়ে ব্যায়াম করে উচ্চতা বাড়াতে পারবে। চেষ্টা করবে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সাঁতার কাটা। ৪০ মিনিট পর্যন্ত সাইকেল চালানো। দড়ি লাফ দিয়েও উচ্চতা বাড়ানো যায়। এছারাও নিম্নের ব্যায়াম গুলো উচ্চতা বাড়াতে করবেন-

১. আপনি সমতল মেঝেতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন তারপর হাতের তালুতে ভর দিয়ে শরীরের উপরের অংশটি আস্তে আস্তে করে উপরে তুলুন তারপর মেরুদন্ড বাঁকা করে মাথাটি যত পারেন বাঁকা করবেন। এই ব্যায়াম প্রতিদিন ৫-৬ বার করুন।

২. হাঁটু ভাঁজ করে বাঘের মতো হাতের তালু এবং পায়ের হাঁটুতে ভর দিয়ে বসবেন। তারপর মাথাকে উপরের দিকে বাঁকা করে আপনার পিটকে নিচের দিকে বাঁকিয়ে নিন এবার মাথাকে নিচের দিকে নিন আর পিটকে উপর দিকে বাঁকিয়ে তুলুন। এছারাও নিয়মিত পুশআপ দৈহিক উচ্চতা বাড়ায়।

ভিটামিন ডি খেলে কী লম্বা হওয়া যায়

লম্বা হতে হলে আপনাকে খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। সুষম, ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার দৈহিক বৃদ্ধি ঘটায়। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেলে অবশ্যই লম্বা হওয়া যায়। আমাদের জানতে হবে ভিটামিন ডি এর উৎসগুলো কী? সকালের সূর্যে ভিটামিন ডি থাকে। ভিটামিন ডি শরীরে অভাব থাকলে হাড় নরম হয়ে যায়। যা উচ্চতা বাড়াতে ব্যহত করে। কোন খাবারে ভিটামিন ডি থাকে জানতে হবে। সেলমন ফিস, কলিজা , ডিম, দুধ, লিভার অয়েল, মাশরুম, পনির ,কলা, ওটস এসব খাবারে ভিটামিন ডি থাকে। এছারাও শুকনা খাবার যেমন- কিসমিস, আলু বোখরা, খেজুর এই খাবার গুলোতে ভিটামিন ডি থাকে। এসব খাবার নিয়মিত খেলে লম্বা হওয়া যায়।

কত বছর বয়স পর্যন্ত লম্বা হওয়া যায়

মানুষের দেহে বিশেষ একটি অংশ রয়েছে। সেই অংশটি বয়ঃসন্ধিকালে পূর্নভাবে গঠিত হয়। যার ফলে ফলে বয়ঃসন্ধিকালের পরে উচ্চতা বাড়ার প্রবনতা কমে যায়। প্রাকৃতিক নিয়মে ছেলেরা সাধারণত ১৬ বছর বয়সে অধিক হারে লম্বা হয়। মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি লম্বা হয় ১৩ বছর বয়সে। তারপর ক্রমানয়ে কমতে থাকে । উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ হয় এমন অভ্যাস ছাড়তে হবে। ধুমপান, মদ্যপান, মানসিক চাপ উচ্চতা বাড়াতে বাধাগ্রস্থ করে। ছেলেদের উচ্চতা বাড়ার শেষ সময়কাল ২৫ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। মানুষের উচ্চতা বৃদ্ধি বয়সের উপর নির্ভর করে। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ে ছেলে ও মেয়েরা বেশি লম্বা হয়।

কীভাবে ঘুমালে লম্বা হওয়া যায়

লম্বা হওয়ার জন্যে অনেকগুলো টিপস আলোচনা করেছি। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের উচ্চতার বৃদ্ধি ঘটায়। ব্যায়াম ও সুষম খাবার খেলে শুধু উচ্চতা বাড়বেনা পর্যাপ্ত ঘুমও প্রোয়োজন। আপনারা যদি লম্বা হতে চান তবে প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর সময় শক্ত বিছানা তবে শক্ত বালিশ ব্যবহার করা যাবেনা। আপনারা সবসময় সোজা হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। সারাদিন পরিশ্রমের ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্লান্ত শরীরের উচ্চতা বাড়াতে বাধা দেয়।

যে কারনে শিশুর উচ্চতা কম বেশি হয়

উচ্চতার সাথে হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে। গ্রৌথ হরমোনের প্রয়োজনীয়তা বেশি । শিশুদের উচ্চতার ক্ষেত্রে জিনগত কারণ বেশি দায়ী। তবে শিশুদের পুষ্টিতে ঘাটতি থাকলে জটিল রোগ বাসা বাধে,ফলে উচ্চতা বাড়েনা। শিশুদের খাবারে সঠিক অনুপাতে ভিটামিন থাকতে হবে। তাই প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় এ খাবারগুলো রাখুন

  • কলা: প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। হাড় মজবুত করে,শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধি পায়
  • দুধ: দুধে প্রচুর প্রোটিন থাকে । শিশুদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন দুধ রাখুন।
  • ডিম: ডিম প্রোটিনের প্র্রধান উৎস। যা শিশুদের বৃদ্ধি ঘটায়।

এসব ছাড়াও শিশুদের ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়াবেন। ভিটামিন ডি যুক্ত ফল আম,পেপে,টমেটো,কলা ইত্যাদি শিশুদের উচ্চতা বাড়ায়।

গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধি করার উপায়

শরীরের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রৌথ হরমোন উৎপন্ন হয়। যা আপনার উচ্চতা বাড়ায়। হাড়ের গঠনে গ্রৌথ হরমোন ভূমিকা পালন করে। তাই গ্রৌথ হরমোন কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা জানতে হবে। পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে এ হরমোন বৃদ্ধি পায়। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়রনযুক্ত খাবার খেতে হবে। বিভিন্ন ব্যায়ামের ফলে এ হরমোন বৃদ্ধি পাবে। উচ্চতা বাড়াতে উপরের টিপসে যে ব্যায়ামগুলোর কথা বলেছি গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধি করতে সে ব্যায়ামগুলো করবেন।

গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধির খাবার

গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধি করতে কিছু নিয়ম মানতে হবে। খাবারের তালিকায় প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। চলুন জানা যাক কি খাবারে এ হরমোন বৃদ্ধি পায়-

  • লাল মাংস: লাল মাংস প্রোটিনের উৎস। যা গ্রৌথ হরমোনকে বাড়ায়।
  • গাজর: গাজর স্নায়ুতন্ত্রকে মজবুত করে, গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
  • সিমের বিচি: সিমের বিচি জিংক এবং ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস যা এ হরমোনকে বাড়ায়।
  • মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে ভিটামিন এ থাকে যার ফলে এ হরমোন বৃদ্ধি পায়।
  • সয়াবিন: সয়াবিন প্রোটিন জাতিয় খাবার, গ্রৌথ হরমোন বাড়াতে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম খাবেন।
  • দই: দই এটি প্রোটিন যুক্ত খাবার, নিয়ম করে খাবারের পর এটি খাবেন।

এসব ছিল গ্রৌথ হরমোন বৃদ্ধি করার খাবারের তালিকা। গ্রৌথ হরমোন ঠিক থাকলে উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চতা বৃদ্ধিতে উপরের টিপস গুলো অবশ্যই আপনারা মেনে চলবেন।

কীভাবে লম্বা হওয়া যায় – লম্বা হওয়ার লক্ষন সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কীভাবে লম্বা হওয়া যায় – লম্বা হওয়ার লক্ষন সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button