আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠকগণ, আজ আমরা আম খাওয়ার উপকারিতা এবং ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা করব: আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম। আমরা সকলেই আম পছন্দ করি, তা কাঁচা হোক বা পাকা। তবে, পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও, সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে না খেলে আমাদের শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আম খাওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই আম খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলি জেনে রাখা উচিত। আজকের প্রবন্ধটি এই বিষয়গুলি নিয়ে। আর যদি আপনি এই সমস্ত তথ্য জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি পড়ুন।

আমের মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা খাওয়ার ফলে আমাদের দেহে বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরন হয়ে থাকে। তবে আম খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আমরা অনেকেই আম খাওয়া সঠিক নিয়ম, কোন সময়ে আম খাবো, কতটুক আম খাবো এসব না জেনেই আম খায়। ফলে আম খেলে যে উপকার পাওয়া যায় সেটা আমরা পায় না বরং শরীরের আরও ক্ষতি হয়। তাই সঠিক নিয়ম জেনে আম খাওয়া উচিত। চলুন তাহলে জেনে নিই আম আমরা কখন খাবো এবং আম খাওয়ার উপকার ও অপকার সম্পর্কে।

পাকা আমের উপকারিতা

আম আমরা সবাই পছন্দ করি। আম পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কম রয়েছেন। আমের মধ্যে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, জিংক, কপার, থায়ামিন, ভিটামিন এ’, ভিটামিন বি’, ভিটামিন সি, রয়েছে এসব ভিটামিন প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন। পাকা আম যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি পাকা আমের উপকারিতাও অনেক রয়েছে। পাকা আমের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন তাহলে জেনে নিই পাকা আম খেলে কি উপকার হয়।

  • পাকা আম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমের মধ্যে ভিটামিন সি’, এ’ এবং অন্যান্য এসেন্সিয়াল নিউট্রেইন্টস থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ঘুমের সমস্যার সমাধান করে এই পাকা আম। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে একটা পাকা আম খাবেন, সমস্যার সমাধান পাবেন।
  • পাকা আম নিয়মিত খেলে ওজন বাড়ে। যারা রোগা পাতলা, যদি ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টা পাকা আম খেয়ে তারপর এক গ্লাস দুধ খাবেন, আপনার ওজন বাড়বে। আর যারা ওজন কমাতে চান তারা কাঁচা আম খাবেন।
  • পাকা আম খেলে হার্ট ভালো থাকে। পাকা আমের মধ্যে ফাইবার, ভিটামিন সি,প্যাকটিন সিরাম, রয়েছে যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্ট ভালো রাখে।
  • প্রতিদিন নিয়মিত আম খেলে হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে হয়। আমে ফাইবার থাকে যা হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস্টিকের সমস্যার সমাধান করে।
  • চোখের সমস্যার সমাধান হয় পাকা আম খেলে । আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ রয়েছে যা আমাদের চোখের স্বাস্থ ভালো রাখে।
  • আম খেলে ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষনায় দেখা গেছে আমের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • পাকা আম খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে নতুন করে শক্তির জোগান দেয় এবং শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পূরন করে থাকে।
  • আমে রয়েছে ভিটামিন বি’ কমপ্লেক্স এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।
  • নিয়মিত পাকা আম খেলে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ ভালো থাকে। আমে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ত্বককে সুস্থ রাখে, ব্রন কমায় এবং আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলকে ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে ও চুল পড়া কমায়।
  • আম আঁশযুক্ত খাবার হওয়ায়, আম খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • আমে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা খেলে আমাদের হাড় মজবুত করে, হাড়ের স্বাস্থ ভালো থাকে।
  • আমে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে, প্রায় ৮০ শতাংশ পানি থাকে আমের মধ্যে যার ফলে আম খেলে হিট স্ট্র্রোক প্রতিরোধ করে।
  • আমে উপস্থিত ভিটামিন কে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

উপরে পাকা আম খাওয়ার উপকার সম্পর্কে আলোচনা করলাম। তবে পুষ্টিবীদরা বলে থাকেন সব কিছুর ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। তাই অমিরিক্ত আম খাওয়া আমাদের স্বাস্থের জন্য ভালো নয়। আমের উপাকার পেতে চাইলে সঠিক নিয়মে আম খেতে হবে।

আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম

আমকে ফলের রাজা বলা হয়। এ ফলের পুষ্টিগুনের শেষ নেই। আম আমাদের স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারি। তবে যতই পুষ্টিগুন থাকুক না কেন আম আমাদের সঠিক নিয়মে খেতে হবে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া চলবে না। সঠিক নিয়মে আম না খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সঠিক নিয়ম জেনে আম খাওয়া জরুরি।

  • প্রতিদিন আম খেতে হবে ২ টি থেকে ৩ টি, ৩ টির বেশি আম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নই। আম কাটার সাথে সাথেই খাবেন, আম কেটে রেখে অনেক্ষন পর খাবেন না। এতে আপনার স্বাস্থের ক্ষতি হতে পারে।
  • আম এবং দই একসাথে মিশিয়ে খাবেন না। আমের মধ্যে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো দইয়ের সাথে মিশলে, আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
  • আম খাওয়ার সাথে সাথেই পানি খাবেন না, আপনার হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই আম খাওয়ার আধা ঘন্টা পর পানি খাবেন।
  • আম খাওয়ার আগে ৩ ঘন্টা মতো আম ভিজিয়ে রেখে তারপর আম খাবেন। আমে ফাইটিক অ্যাসিড থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ভিজিয়ে রাখলে সে অ্যাসিড আর থাকে না।
  • রাতের খাবারের পর আম খাবেন না। কারন আম ভারী ফল, রাতে খাবারের পর আম খেলে হজমে সমস্যা হয়।
  • আম খাওয়া পর অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন আম খাওয়া পর তেলে ভাজা খাবার খেলে, পেটে তাপ বাড়ায় এবং মুখে ব্রন বের হয়
  • এছারাও আম খাওয়ার পর করলা, কোল্ডড্রিঙ্কস ও অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

উপরে বলা নিয়ম অনুসারে আম খাবেন, আমে থাকা পুষ্টিগুন আপনার শরীরে উপকারে আসবে।

আম খাওয়ার সঠিক সময়

আমের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে এটা সত্য তবে তাই বলে ইচ্ছামতো যতটা খুশি এবং যেকোনো সময় আম খাওয়া যাবে না। আমের সিজনে আম আমরা সবাই খাই। কেউ রুটির সাথে খায়, কেউ সকালে খালি পেটে খায়, কেউবা দুপুরে, বিকেলে অথবা রাতে খায়। নিয়ম মেনে, সঠিক সময়ে আম আমরা কজন খায়। তবে সঠিক সময়ে আম না খেলে আমাদের উপকারের বদলে অপকার বেশি হয়। তাই সঠিক সময়ে আম খাওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞরা জানেয়েছেন, আম খাওয়ার সঠিক সময় হলো মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালে নাশতা খাওয়ার পর এবং দুপুরে নাশতা খাওয়ার মাঝামাঝি সময়ে। এ সময় আম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিকেলে ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যেও আম খাওয়া যায়। কিন্তু মধ্য সকালটায় আম খাওয়ার উপযুক্ত সময়।

তবে সকালে খালি পেটে আম খাওয়া যাবেনা। সকালে নাস্তার পর ১১ টার মধ্যে আম খেতে হবে। রাতের খাবারের পরও আম খাওয়া যাবে না। রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেলে আম খাবেন না, কারন আম হলো ভারী ফল যা আপনার হজম করতে সমস্যা হবে।

আম খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে

পুুষ্টিগুনে ভরপুর এ ফল আমরা সবাই খেতে চাই। তাই ডায়াবেটিকস রোগীরা চিন্তায় পড়ে যান আম খাওয়া যাবে কিনা, কতটুক আম খাবো এসব বিষয় নিয়ে। এখন প্রশ্ন হলো আম খেলে কী ডায়াবেটিস বাড়ে? উত্তর হলো সঠিক মাপে না খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে। তবে শুধু যাদের ডায়াবেটিস আছে তারাই কেবল সঠিক মাপে আম খাবেন এটা নয়, সুস্থ মানুষেরাও সঠিক মাপে আম খাবেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডায়াবেটিকস রোগিরাও আম খেতে পারবেন তবে সঠিক সময়ে পরিমাপ করে খাবেন। যেসব ফলকে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের অন্তরভুক্ত করা হয়েছে সেসব ফল ডায়বেটিস রোগীদের খেতে বলা হয়েছে। আমকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অনেকগুলো আম একসাথে খেতে পারবেন না। পাকা আম মিষ্টি হওয়ায় ডায়াবেটিকস রোগীর দিনে ৬০ গ্রাম মতো আম খাবেন অথবা আমকে ছোট ছোট করে কেটে ২ কাপ পরিমান খাবেন। দৈনিক ২ থেকে ৩ স্লাইস আম খাবেন এবং মধ্য সকালে আম খাবেন। সকালে খালি পেটে অথবা রাতে আম খাবেন না। প্রোটিন যোগ করে খেতে পারেন এবং ন্সাকস হিসেবেও খেতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিস বাড়বেনা। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে শর্করা সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আম খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো ক্ষতি হবে না। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের আম খাওয়ার বিষয় নিয়ে চিন্তার কোনো কারন নেই। আপনারা সঠিক সময়ে এবং পরিমাপের দিকে লক্ষ্য রেখে আম খাবেন তাহলে ডায়াবেটিস বাড়বে না

আমের জন্য কোন জেলা বিখ্যাত

আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশে যেসব ফল উৎপাদিত হয় তার মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা বেশি। আম স্বাদে, গন্ধে এবং পুষ্টিতে সবার উপরে। আমের জন্য চাঁপানবাবগঞ্জ জেলা প্রথমে বিখ্যাত ছিল। তবে এখন বিভিন্ন জেলাই আম উৎপাদন হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নওগাঁ, যশোর, সাতক্ষীরায় এখন আম উৎপাদিত হচ্ছে। আমের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা প্রশ্ন আসতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী এবং নওগাঁর নাম উঠে আসে। তবে আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাই বিখ্যাত বলে ধারনা করা হয়। ২০২৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের উৎপাদন বেশি হয়েছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাই বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়, যা খেতে খুবই সুস্বাদু। এদের মধ্যে সবচেয়ে আগে আসে গোপালভোগ অথবা হিমসাগর। আরও বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে, যেমন-ল্যাংড়া আম, ফজলী, মোহনভোগ, রাজভোগ, সুরমাই ফজলি,পারিজা, বনখাসা, কাঁচামিঠা, গোপালখাস ইত্যাদি। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলাই বিভিন্ন জায়গায় আমের বাজার বসে। তবে সবথেকে বড় বাজার হলো কানসাট আম বাজার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এখন বিভিন্ন বড় বড় দেশে আম রপ্তানি শুরু হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলোতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম পৌঁছে দিচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষের আয়ের সবথেকে বড় উৎস হলো আম।

আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button