ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়
আপনি কি ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের ৫টি উপায় খুঁজছেন? আপনি হয়তো এই বিষয়ে অনেক সাইট অনুসন্ধান করেছেন কিন্তু কোথাও সঠিক বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছেন না। যদি তাই হয়, তাহলে আপনার আজকের আমাদের নিবন্ধটি মনোযোগ সহকারে পড়া উচিত। আমরা আপনাকে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করব যা জেনে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।
কারণ আমরা ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের ৫টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব, পাশাপাশি ভিডিও না তৈরি করে কীভাবে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করা যায়, ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন কি হালাল, ইউটিউব থেকে অর্থ উত্তোলনের উপায় এবং ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে কত টাকা উপার্জন করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করব
উপস্থাপনা
ইউটিউব হচ্ছে সারা দুনিয়া জুড়ে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসাবে পরিচিত। এর ব্যবহার পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বোঝা যায়। প্রতি মিনিটে ৫০০ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড হয় এই প্লাটফর্মটিতে। আমরা এখানে প্রায় ১ বিলিয়ন ঘণ্টার বেশি ভিডিও দেখছি।
এর জনপ্রিয়তা অন্যান্য দেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও বেড়ে চলেছে। এখন বাংলাদেশেও অনেক বড় মাপের ইউটিউবার আছে। শুধু তাই নয়, নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে অনেকেই কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে প্রফেশনাল কোর্স করে নিজেকে প্রফেশন হিসেবে গড়ে তুলছে।
এসব জানার পর অধিকাংশ মানুষই ইউটিউবে নতুন একাউন্ট খুলে ভিডিও বানানো শুরু করছে। কিন্তু কিভাবে আয় হবে এই বিষয়ে তারা অনেকেই জানেনা। মূলত এই আর্টিকেলটিতে সে বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো। এখানে আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়। যারা এ জগতে নতুন তারা আশা করি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়
ইউটিউব হচ্ছে মূলত এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে কন্টেন্ট যদি ভালো হয়, তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে। তবে তার জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। যেমন ইউটিউব থেকে আয় করার কয়েকটি মাধ্যম আছে যেখান থেকেই ইনকাম আসে সেগুলো জানতে হবে। তার মধ্যে আমরা সেরা ৫টি উপায় নিয়ে নিচে আলোচনা করেছি।
১. বিজ্ঞাপন থেকে আয়
যে সব ইউটিউব চ্যানেলে আগে থেকেই অনেক ভিউয়ার এবং ফ্যান ফলোয়ার আছে তাদের জন্য অর্থ উপার্জন করার অন্যতম উপায় হলো স্পন্সরশিপ। যেমন এক্ষেত্রে একটি কোম্পানি আপনাকে অর্থ দিবে এরপরে আপনাকে আপনার কন্টেন্ট এর মধ্যে সেই কোম্পানির কথা উল্লেখ করেন। এতে করে আপনার ইনকাম করা হলো এবং এর পাশাপাশি কোম্পানিরও লাভ হয়ে গেলো।
২. অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে ইনকাম
ইউটিউব মূলত বিজ্ঞাপন থেকেই অর্থ দেয়। সুতরাং আপনি যে পরিমাণে অর্থ চাইবেন সবসময় সেই পরিমান ইনকাম হয় না। এজন্য অনেক ইউটিউবার কিছু ক্রিয়েটিভ উপায় এ ইনকাম করার চিন্তা করে থাকেন। এক্ষেত্রে যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনাকে চুক্তিতে যেতে হবে, আর তাদের পণ্যের লিংক আপনার ভিডিও কন্টেন্ট এর ডেসক্রিপশনে দিয়ে রাখতে হবে এবং এর পাশাপাশি আপনাকে তাদের সেবা বা পণ্যটির কথা বলে দিতে হবে। তখন এই লিংকে ক্লিক করে যারা তাদের সেবা বা পণ্যটি ক্রয় করবেন তার থেকে আপনি কমিশন হিসেবে টাকা পেয়ে যাবেন। এতে আপনারও লাভ হবে এবং কোম্পানিও সাথে সাথে প্রচার হয়ে যাবে।
৩. ডোনেশন এর মাধ্যমে আয়
আপনার চ্যানেল এর সাবস্ক্রাইবাররা ভিডিও দেখে আপনাকে নিজের পকেট থেকে কিছু অর্থ ডোনেট করার প্রক্রিয়া ইউটিউবে আছে। তবে এই প্রক্রিয়াটির একটি বিশেষ মাধ্যম রয়েছে। সেই মাধ্যমটি হচ্ছে প্যাট্রেয়ন নামক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি করার উদ্দেশ্য হলো ইউটিবাররা তাদের ভিউয়ার্সদের কাছ থেকে কিছু অর্থায়ন পায়। যাতে করে তাদের কিছুটা সহোযোগিতা হয়ে যায়।
৪. নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে আয় করা
এটা সাধারণত হয়ে থাকে যে সব ইউটিউবারদের অনেক ফ্যান থাকে। তখন সেই চ্যানেলের লোগো দিয়ে টি-শার্ট, চাবির রিং, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করে সেটা চ্যানেলের ফ্যানদের কাছে বিক্রি করা যেতে পারে। আর এই ইনকাম একদমই সহজ হয়ে থাকে। প্রচার করা নিয়ে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। এভাবেও বর্তমানে অনেক ইউটিউবাররা প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছেন।
৫. স্পন্সরশিপ এর মাধ্যমে আয় করা
যে সব ইউটিউবারদের আগের থেকেই অনেক বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে তাদের জন্য টাকা ইনকাম করার আরেকটি অন্যতম সেরা উপায় হলো স্পন্সরশিপ এর মাধ্যমে আয় করা। তাদের জন্য অন্যান্য কোম্পানির পণ্য বিক্রয় করে ইনকাম করার একটি সহজ উপায়।
শুধু আপনার ভিডিওর মধ্যে আপনি যেই কোম্পানির পন্য বিক্রয় করতে চান, সেই পন্যটির বিস্তারিত কিছু কথা ভিডিওতে উল্লেখ ক্রতে হয়। তা দেখেই তারা সেই কোম্পানির পন্য বা সেবা নিতে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবেন।
ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম
অনেক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে পার্ট টাইম জব হিসেবে ইউটিউব চ্যানেলকে বেছে নেওয়ার চিন্তা করে থাকেন। যারা নিজেদের ব্যবসা বা চাকরির পাশাপাশি পার্ট টাইম জব হিসেবে ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে চান, তাদের নিজে থেকে ভিডিও মেকিং নকরার মতো সময় পায় না।
এক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার উপায়গুলি খুঁজে থাকেন। আবার অনেকের ইউটিউবে ভিডিও মেকিং করার আগ্রহ থাকলেও তারা ক্যামেরার সামনে সেভাবে কথা বলতে পারে না ফলে ভিডিও রেকর্ড করা হয় না।
এছাড়াও আবার অনেকের ভিডিও এডিটিং দক্ষতা না থাকার ফলে কারণে উচ্চ মানের ভিডিও তৈরি করতে ব্যর্থ হন। তাদের ক্ষেত্রে ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম এর উপায় খুবই কার্যকর। এজন্য আমরা নিচে বেশ কয়েকটি উপায় উল্লেখ করেছি যেমনঃ
- সাউন্ড ইফেক্ট তৈরি করুন
- ভিডিও গেমগুলো লাইভ করুন
- মিউজিক তৈরি করুন
- টিউটোরিয়াল তৈরি করুন
- এনিমেশন ভিডিও তৈরি করুন
- ফ্রি স্টক ভিডিও ব্যবহার করুন
- অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিডিও শেয়ার করুন
- স্লাইড ডেক এবং উপস্থাপনা তৈরি করুন
- ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায়
প্রথমে, আপনাকে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করতে হবে। একবার আপনি মনিটাইজেশন পেয়ে গেলে, আপনাকে কয়েক দিনের মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
গুগল এডসেন্স কর্তৃপক্ষ যদি আবেদনটি অ্যাপ্রুভাল করে থাকে তাহলে আপনার একাউন্টে ডলার ঢুকতে শুরু করবে এবং একাউন্টে ১০ ডলার হয়ে গেলে আপনার ঠিকানায় (যেই ঠিকানা গুগলকে দিয়েছিলেন) সেই ঠিকানা অনুযায়ী গুগল এডসেন্সের পিন ভেরিফিকেশন একটি চিঠি আসবে।
সেই চিঠিতে একটি কোড লেখা থাকে। সেই কোডটি দিয়ে আপনার থাকবে। গুগল এডসেন্স পিন ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে। আরা আপনি যদি এই কাজটি না করেন, তাহলে জমানো টাকা গুলো উত্তোলন করতে পারবেন না। আর আপনার গুগল এডসেন্স পিউন ভেরিফিকেশন করা হয়ে গেলে সেখানে আপনাকে একটি ব্যাংক একাউন্ট দিতে হবে।
আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট গুগল এডসেন্স এর সাথে সংযুক্ত করে নিতে হবে। তারপর আপনার চ্যানেলে যখন ১০০ ডলার হয়ে যাবে তখন গুগল এডসেন্স কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে টাকাগুলো আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেবে। আপনি যে পরিমাণে ডলার ইনকাম করেছেন সেই পরিমাণ বাংলাদেশি টাকা হিসেবে পেয়ে যাবেন এতে কোন প্রকার সমস্যা হবে না।
ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল
আপনারা কি জানেন ইউটিউব প্লাটফর্ম থেকে ইনকাম করা টাকা কি হালাল হবে? এটি ইসলামে কতটুকু জায়েজ আছে তা নিয়েই পোষ্টের এই অংশে বিস্তারিত তথ্য জানানোর চেষ্টা করব। প্রথমত ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার প্রথম ধাপ আপনার কনটেন্ট। সেটির উপর আপনাকে বেশ নজর দিতে হবে। কেননা আপনি যে ভিডিও তৈরি করছেন সেটি ইসলামী শরীয়তে মানুষের জন্য উপকার হচ্ছে কিনা।
যদি আপনার কনটেন্ট থেকে মানুষ উপকার পায় তাহলে এই ধরনের ভিডিও থেকে ইনকাম করা টাকা ইনকাম করে ভোগ করতে পারবেন। তবে আপনার ভিডিওতে কোন ধরনের খারাপ কিছু দিক-নির্দেশনা দেন কিংবা আপনার ভিডিওতে যদি খারাপ বিজ্ঞাপন দেখায় তাহলে র সেটি ইসলামী শরীয়তে জায়েজ হবে না। তাই এ ধরণের ভিডিও বা বিজ্ঞাপন ভিডিও থেকে টাকা ইনকাম করা হারাম।
আপনি YouTube থেকে প্রতি মাসে কত টাকা আয় করতে পারেন?
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে ইউটিউবে বড় বড় কনটেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছে যারা প্রতিদিন কত সুন্দর ভিডিও আপলোড করে এই কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আসলে ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম হয়? মূলত আপনি ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে কত টাকা ইনকাম করবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ভিডিওতে কেমন ভিউ হয়।
এক মাসে আপনার ইনকাম অনেক বেশি হবে আবার অন্য মাসে আপনার ইনকাম কম হবে। আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেল খুলে কাজ শুরু করে দেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে প্রথমে অনেক কম ইনকাম হয় আর আপনার ইউটিউব থেকে ইনকাম আস্তে আস্তে বাড়বে
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যদি আপনি প্রতিদিন কোন না কোন কনটেন্ট আপলোড করেন কিংবা আপনার চ্যানেলটি যদি টপ লেবেল হয়ে থাকে এবং আপনার পাবলিশ করা কন্টেনগুলো থেকে অধিক পরিমাণে ভিউ হচ্ছে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি প্রতি মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ইনকাম করতে পারেন। তবে এটি সম্পূর্ণ আপনার কন্টেন্টের উপর নির্ধারণ করবে।
পরিশেষে আমি বলব দেশের এক প্রান্ত থেকে প্রান্তের মানুষ এই মাধ্যমগুলো থেকেই প্রতিমাসে লাখ লাখ ডলার ইনকাম করছেন। তাহলে আপনি কেন পারবেন না? আসলে চেষ্টা করলে এই দুনিয়াতে সবই সম্ভব। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা জব ছেড়ে দিয়ে ফুল টাইম এই ইউটিউবিং করছেন।
এখন আপনি হয়তো ভাবছেন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার যুক্তি কী? এই প্রশ্নের উত্তর হল, একবার আপনি ইউটিউবে ভালো করতে শুরু করলে, আপনি সরকারি এবং বেসরকারি খাতের তুলনায় অনেক বেশি আয় করবেন। এই দিকগুলি বিবেচনা করলে, যারা এই ইউটিউব খাতে ভালো করতে পারে তারা দিনের শেষে এখানে কিছু না কিছু করবেই।